দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আপনি কি দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। বেশিরভাগ মানুষই দুধের  উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানে না। যার ফলে দুধ  আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাও বুঝতে পারে না। তাই আমরা এখানে দুধের  উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

দুধ সবারই পরিচিত, দুধ সবাই চিনে। দুধের উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানে। অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করে, আবার অনেকে দুধ একদমই পছন্দ করে না। দুধ ছোট-বড় সবাই খেয়ে থাকে। অনেকে শুধু দুধ খায়। আবার অনেকে দুধ ভাত  দিয়ে কলা দিয়ে খায়। অনেকে দুধ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের রান্নাও করে। 

পেজ সূচিপত্র : দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন 

      ভূমিকা        

বাংলাদেশে গরু ছাগলের দুধ সহজলভ্য। শিশুদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধদেরও গরু-ছাগলের দুধ পান করা উচিত। দুধে অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। দুধ প্রোটিন ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উৎস। দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ, ডি,  বি-১২, নিয়াসিন, রিবোফ্লভিন ও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এসব উপাদান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। দুধ যেমন আমাদের শরীরে উপকার করে, পাশাপাশি অপকারও করে। অপকার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। 

দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখে : দুধে প্রোটিন থাকাই এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত দুধ পান করলে কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে। 
  • ত্বক সুন্দর করে: দুধে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল। যা ত্বককে স্বাস্থ্যকর, নরম, কোমল, মসৃণ  ও তরতাজা রাতে সাহায্য করে।  নিয়মিত দুধ পান করলে ত্বক সুন্দর হবে। 
  • ঘুম ভালো হয়: রাতের ঘুম ভালো করতে গরম দুধ খুব উপকারী পানীয়। অনেকেরই রাতে ঘুম হয় না। নিয়মিত তারা যদি ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করে তবে তাদের ঘুম ভালো হবে। 
  •  হাড় মজবুত করে: দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন কে-২, ভিটামিন ডি যা আমাদের শরীরে বেশি ও হাড়কে শক্তিশালী এবং মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই শিশু ও বৃদ্ধ সবারই নিয়মিত দুধ খাওয়া উচিত। 
  • শক্তি অর্জিত হয়: গরুর দুধে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, সহ নানা রকম উপাদান। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত দুধ পান করলে, শরীরের শক্তি সঞ্চয় করবে ও ক্লান্তি দূর করবে। 
  • ওজন কমাতে সহযোগিতা করে: দুধে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকাই এটি আমাদের ওজন কমাতে ও ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। যাদের ওজন বেশি তাদের নিয়মিত দুধ খাওয়া উচিত। 
  • ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ: দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে যা আমাদের শরীরের কোষকে বৃদ্ধি পেতে নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত দুধ পান করলে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: দুধে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকাই এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 
  • চুলকে স্বাস্থ্যকর করে: চুলকে স্বাস্থ্যকর করতে দুধ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চুলের জন্য দুধ দিয়ে নানা প্রকার প্যাক বানানো যায়। যা চুলে ব্যবহার করলে চুল বৃদ্ধি পাই, চুল পড়া বন্ধ হয়। 
  • ক্যালসিয়ামের অভাব: দূরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। তাই নিয়মিত দুধ পান করলে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়ে যাবে।
  • দাঁতের ক্ষয় রোধ: ক্যালসিয়ামের অভাবে দাঁতের হতে থাকে। তাই বৃদ্ধ হলে দাঁত ক্ষয় হয় আবার অনেক শিশুর দাঁত ক্ষয় হয়। নিয়মিত দুধ খাইলে দাঁত ক্ষয় হওয়া রোধ করবে। কারণ দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। 
  • ডায়াবেটিস কমাতে: ডায়াবেটিস একটি অন্যতম সমস্যা। দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি।  কম ফ্যাট যুক্ত দুধ পান করলে প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস কমাতে দুধ সাহায্য করে। 
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা: গ্যাস্ট্রিকের ফলে অনেক সময়  পেট ব্যথা করে ও পেটের সমস্যা হয়। দুধে থাক আমি না ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি পেটের সমস্যা দূর করে, এসিডিটি কমায় এবং খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে।

দুধ খাওয়ার অপকারিতা 

কিডনিতে পাথর: যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। কিডনিতে পাথর হওয়া রোগীদের দুধ না খাওয়াই উচিত। 
এলার্জি সমস্যা: অনেকের দুধে এলার্জি রয়েছে। তাই দুধ পান করলে  তাদের অ্যালার্জি আরো বাড়বে। তাই এলার্জি যুক্ত ব্যক্তিদের দুধ পান না করাই  উত্তম। 

সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সকালে খালি পেটে দুধ খেলে ব্লাড প্রেসার সহ নানা রকম জটিল সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সারাদিনে দুধ খাওয়ার যে উপকারিতা তার থেকে সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়ার উপকারিতা বেশি। এতে দুধের সমস্ত ভিটামিন ও খনিজ উপাদান  সহজেই দেহে সংগৃহীত হয়। সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়া। 

গরম দুধের উপকারিতা

গরম দুধ আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে। নিয়মিত গরম দুধ পান করলে আমাদের দাঁত ও হাড় মজবুত হয়। আমরা সারাদিন অনেক কাজ করে থাকি ফলে তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। গরম দুধ পান করলে ক্লান্তি দূর হয় ও শরীরের সতেজতা ফিরে আসে। যাদের পেটের সমস্যা আছে, তারা গরম দুধ খেতে পারেন।  গরম দুধ খেলে তাড়াতাড়ি খাবার হজম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। গরম দুধ আমাদের পেশির জন্য খুবই উপকারী। সুতরাং আমাদের সবারই নিয়মিত গরম দুধ খাওয়া উচিত। 

ঠান্ডা দুধের উপকারিতা

গরমের সময় ঠান্ডা দুধ আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। গরমের সময় ঠান্ডা দুধ পান করলে পানি শূন্যতার দূর হয়। তাই গরমের সময় নিয়মিত ঠান্ডা দুধ পান করলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়। অনেকেরই বদহজমের সমস্যা রয়েছে। তারা গরম দুধ পান করলে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। তাই গরম দুধের পরিবর্তে ঠান্ডা দুধ পান করতে হবে। কারণ ঠান্ডা দুধ বদহজমের রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। যাদের গ্যাস্ট্রিক রয়েছে তারা নিয়মিত ঠান্ডা দুধ পান করতে পারেন। গ্যাস্ট্রিকের  রোগীর জন্য ঠান্ডা দুধ ভীষণ উপকারী। 

অতিরিক্ত গরম দুধ পান করলে কি হয়

অতিরিক্ত গরম দুধ পান করলে অনেক সমস্যাই হতে পারে। অতিরিক্ত গরম দুধ খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরে থাকে, পেট ফুলে থাকে এবং বমি বমি লাগে যার ফলে অস্বস্তিকর লাগে। আবার অতিরিক্ত দুধ খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, সহজে ক্লান্তি লাগে ও অলসতা লাগে। আবার পর্যাপ্ত পরিমাণের বেশি দুধ পান করলে এলার্জি সমস্যা বাড়তে পারে, স্মৃতিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা, ভুলে যাওয়ার মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ খাওয়া উচিত। 

দুধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম

বাঁশি দুধ খাওয়া যাবে না। টাটকা দুধ থেকে নিয়ে জ্বাল করে পান করতে হবে। বাশি দুধ খেলে পেটের সমস্যা সহ আরো বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। টাটকা দুধ খাওয়ার গুণগত মান অনেক বেশি। আবার খাওয়ার খাবার খাওয়ার সাথে সাথে দুধ পান করা যাবে না এবং দুধ পান করার আগে টক জাতীয় কিছু খাওয়া যাবে না। খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর দুধ পান করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। 

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই এই পোস্টে দুধ আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা জানতে পেরেছেন। দুধ আমাদের শরীরে যেমন উপকার করে, তেমন পাশাপাশি এর বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। আশা করি এই পোস্ট করে আপনারা দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পান করা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ পান করলে, আমাদের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অন্যদের জানাতে এ পোস্টটি তাদের মধ্যে শেয়ার করুন। 
পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url