নিম গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আপনি কি নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। বেশিরভাগ মানুষই নিম পাতার  উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানে না। যার ফলে নিম পাতা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাও বুঝতে পারে না। তাই আমরা নিম পাতার  উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

নিম গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

৫০০০বছর ধরে নিমের ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে। ১৩০ টি ওষুধি গুণ রয়েছে নিমের। নিম গাছের সবকিছুই আমাদের কাজে লাগে। যেমন - নিমের পাতা, ডাল, ফুল-ফল ও কাঠ  এই সবই আমাদের কাজে লাগে। সাধারণ মানুষের জীবনে নিম গাছের প্রচুর ব্যবহৃত হয়, কারণ নিম গাছ ঔষধি গুণে ভরপুর। 

পেজ সূচিপত্র ঃনিম গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

ভূমিকা 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিমপাতা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে। নিম গাছ আমাদের সবারই পরিচিত। নিম গাছের প্রতিটি অংশই কাজে লাগে। এটি প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। তবে অতিরিক্ত নিম পাতা ব্যবহার করলে বেশ কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিমপাতা আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যকর গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু পরিমাণে বেশি নিমপাতা খেলে আমাদের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক মাসের বেশি নিম পাতা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে উপকার হওয়ার থেকে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।  নিম পাতা এক উপাদান যার প্রতিটি অংশই কোন না কোন রোগের প্রতিষেধক। নিম পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, আন্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। এসব উপাদান আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। 

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। তবে পরিমাণের থেকে বেশি নিম পাতা সেবন করলে আমাদের স্বাস্থ্যের অপকার করতে পারে। নিচে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
উপকারিতাঃ

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: প্রতিদিন সকালে  কিছু  নিম পাতা থেঁতো করে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বাড়ে। 
  • ত্বকের যত্নে: নিমের পাতা ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। মুখে ব্রণ উঠলে নিম পাতার বেটে লাগালে ব্রণ দূর হবে। ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। 
  • খুশকি দূরীকরণ: পরিমাণ মতো পানি ও কিছু নিমপাতা নিন। তারপর পানির যতক্ষণ না পর্যন্ত সবুজ হচ্ছে ততক্ষণ নিমপাতা সেদ্ধ করুন। এরপর তা ঠান্ডা করুন এবং ছাকনি দিয়ে ছেকে নেন।  গোসলের সময় চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধোয়ার পর এই পানি দিয়ে মাথা পরিষ্কার করুন। 
  • দাতের সমস্যা দূরীকরণ:  নিয়মিত নিমের কচি ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত মজবুত হয় এবং রক্ষা পাবেন দন্তরোধ থেকে। নিম পাতার নির্যাস পানিতে মিশিয়ে  বা নিমের রস দিয়ে মুখ আলতো করে ধুয়ে ফেললে দাঁতের পচন, দাঁতে রোগের আক্রমণ, মাড়ির ব্যথা এবং রক্তপাত কমে যায়।
  • কানফোঁড়া দূরীকরণ: সামান্য পরিমাণে নিম পাতা গুঁড়ো করে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। যে কোন ধরনের কানফোঁড়া হলে মিশ্রনের কয়েক ফোঁটা দিন। তাহলে সেই কানফোঁড়া সেরে যাবে। 
  • চোখের সমস্যা দূরীকরণ: চোখের প্রদাহ, লালচে ভাব ও ক্লান্তি দূর করতে কিছু পরিমাণে নিম পাতা সিদ্ধ করতে হবে এবং পানি দিয়ে দিতে হবে। তারপর পুরাপুরি ঠান্ডা করে নিতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে সেই পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিতে হবে। আবার চোখে চুলকানি হলে পরিমাণ মতো নিমপাতা নিয়ে দশ মিনিট সিদ্ধ করে নিতে হবে এবং সেই পানি দিয়ে চোখে ঝাপটা দিতে হবে। তাহলে আরামবোধ করবেন। 
  • খোস পচড়া বা চুলকানি দূরীকরণ: পানি দিয়ে কিছু পরিমাণে নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোস পচড়া বা চুলকানি দূর হয়ে যায়। পাতাবা ফুল পেস্ট করে কিছুদিন গায়ে লাগালে দূর হয়ে যায়। 
  • এলার্জি: যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা পরিমাণে নিমপাতা পানি দিয়ে সেদ্ধ করে তা ঠান্ডা করে নিন এবং সেই পানি দিয়ে গোসল করে নিন। তাহলে এলার্জি সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 
  • পেটের সমস্যা দূরীকরণ: অনেকদিন ধরে যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন পাতলা পায়খানা হয়েছে। তারা ৩০ ফোঁটা নিমপাতার রস এক কাপ পানির চারভাগের এক ভাগ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল বিকাল পান করলে তার উপকার পাওয়া যাবে। 
  • ছত্রাকের ইনফেকশন দূরীকরণ: নিমে রয়েছে নিম্বিডল এবং জেডুনিন যা ফাঙ্গাস ধ্বংস করতে পারে। তাই কারো যদি ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়ে থাকে। তাহলে নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে সেই পেস্ট লাগিয়ে দিলে নিরাময় পাওয়া যাবে। 
  • বাতের ব্যথা দূরীকরণ: যাদের বাতে ব্যথা রয়েছে তারা নিম ব্যবহার করতে পারেন। কারণ নিমপাতা, মিমের বীজ ও আকোল বাতের ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাতে ব্যথায় নিমের তেল ম্যাসাজ বেশ আরাম পাওয়া যাবে। 
  • ম্যালেরিয়া দূরীকরণ: নিমে রয়েছে উপাদান যা ম্যালেরিয়ার ওষুধ  হিসেবে কাজ করে। সামান্য পরিমাণে নিমপাতা নিয়ে তা পানির সাথে সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে নিতে হবে এবং তা বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিন বাড়িতে সেই বোতলের পানি স্প্রে করলে মশার উপদ্রব কমে যাবে। 
  • ঠান্ডা জনিত বুকে ব্যথা: অনেক সময় ঠান্ডা কারণে বুকে কফ জমে থাকে এবং ব্যথা অনুভব হয়। এইজন্য ৩০ ফোঁটা নিমের পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে  তিন চারবার কমে যাবে এবং কফ দূর হবে। তবে এটি গর্ভবতীদের জন্য নিষিদ্ধ। 
  • ক্ষত সারাতে: আঘাত লাগলে বা পোকামাকড় কামড় দিলে বা হুল ফোটালে ক্ষত স্থানে নিয়মিত নিমের পাতা পেস্ট করে  লাগিয়ে দিলে দ্রুত ক্ষত সেরে যাবে এবং ব্যথা কমবে। 
  • ওজন কমাতে: অনেকেই ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত নিমের ফুলের জুস সেবন করুন। নিম ফুল মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাই একমুঠো নিম ফুল করে এক চামচ এবং আধা চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিক্সড করুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এ মিশ্রণটি সেবন করুন। তাহলে আপনার ওজন কমবে। 
  • কৃমিনাশক: পেটে কৃমি হলে শিশু বা বড় যেই হোক তার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, রোগা হয়ে যায়। বেশিরভাগ শিশুদের পেটে কৃমি হয়। নিম পাতার কৃমির প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। তাই ৫০ মিলিগ্রাম নিম গাছের মূলের গুড়া দিনে তিনবার সামান্য গরম পানি সহ খেতে হবে এবং ৩-৪ গ্রাম নিমছাল চুনা সামান্য লবণসহ খালি পেটে খেলে কৃমির উপদ্রব কমে যাবে। 
  • উকুন বিনাশে: উকুনের সমস্যা হয় তারা নিম ব্যবহার করতে পারেন। কারণ নিম ব্যবহার করলে উকুনের সমস্যা দূর হবে। নিমের পেজ তৈরি করে মাথার ত্বকে মেসাজ করুন, তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন এবং চিরুনি দিয়ে মাথা আছড়ান। সাপ্তাহে দুই থেকে দুই মাস এভাবে ব্যবহার করুন। তাহলে উকুনের সমস্যা দূর হবে। 
  • রক্ত পরিষ্কার করে: নিম পাতার উপকারী উপাদান থাকাই,  নিম পাতার রস সেবন করলে রক্ত পরিষ্কার করে এবং রক্তের শর্করার মাত্রা কমাই।
  • ভাইরাস জনিত রোগ: নিম পাতার রস ভাইরাস ধ্বংস করে। চিকেন পক্স, হাম ও অন্যান্য চর্ম রোগ হলে আগে নিমপাতা পেস্ট করে লাগানো হতো এবং নিমপাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের জ্বালা পোরা চুলকানি দূর হয়। 
  • জন্ডিস দূরীকরণে: অনেকেই জন্ডিসের ভুগছেন। তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ নিম পাতার রসের সাথে একটু মধু মিশিয়ে পেটে খান। এক সপ্তাহ এভাবে খেতে থাকবেন। তাহলে জন্ডিস নিরাময় হবে । 
নিম পাতার উপকারিতা অনেক নিম গাছের প্রতিটি উপাদানই অনেক বেশি উপকারী বিজ্ঞানীরা বলেন নিম গাছ শ্বাসকষ্টের জন্য অনেক বেশি উপকারী যারা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন তারা বাসায় নিম গাছ রোপন করুন। নিম গাছ অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহায়তা করে। এই জন্য যারা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন তারা বাসায় নিম গাছ লাগান।

নিম গাছের প্রতিটি উপাদানই গুরুত্বপূর্ণ নিম গাছের ডাল শিকড় পাতা থেকে শুরু করে নিম গাছের শিকড় এবং নিম পর্যন্ত উপকারী। এই প্রতিটি উপাদান মানবদেহের বিভিন্ন কাজের সহায়তা করে।. বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের সহায়তা করে। প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে এবার চলুন আমরা এক নজরে দেখে আসি নিম গাছের অপকারিতা।

এক নজরে নিম গাছের অপকারিতা

নিম গাছের অপকারিতা কি? নিম গাছের অপকারিতা সংখ্যা খুবই কম তবে নিম গাছের উপকারিত সংখ্যা অনেক বেশি বিজ্ঞানীরা নিম গাছকে এক আশ্চর্য ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। নিম গাছের নিম ফলের স্বাদ তেতো হলেও এর উপকারিতা অনেক মিষ্টি। চলুন এবার আমরা ঝটপট দেখে নিম গাছের অপকারিতা গুলো কি কি।

  • এলার্জি সমস্যা: পরিমাণের বেশি নিমপাতা খেলে অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খালি পেটে পরিমাণের বেশি নিম পাতা খাওয়া যাবে না। 
  • গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা: গর্ভাবস্থায় তা থেকে বিরত থাকবেন। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন নিম তাতা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। 
নিম গাছের অপকারিতা হিসেবে রয়েছে এলার্জির সমস্যা অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে তবে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন যে নিম পাতায় এলার্জি জনিত উপাদান বিদ্যমান নেই তবে অনেকের নিম পাতায় কিংবা অ্যালার্জি থাকতে পারে এক্ষেত্রে প্রথমে একবার নিম পাতা ব্যবহার করতে হবে যদি অ্যালার্জিজনিত কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্বিতীয় বার আর ব্যবহার করা যাবে না।

তবে নিম পাতা ব্যবহার করার ফলে অনেক ক্ষেত্রে এলার্জি সমস্যা দূর হয় এলার্জির বিরুদ্ধে নিম পাতা কঠোরভাবে কাজ করে। তবে প্রত্যেকের শরীর এক নয় অনেকের শরীরে নিম পাতার ফলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার গর্ভকালীন সময়ে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গর্ভকালীন সময় যদি কেউ অতিরিক্ত নিমপাতা কিংবা নিম ফল খেয়ে থাকে তাহলে তার গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এইজন্য গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শবিহীন কোন কিছু সেবন করবেন ্না। পাঠক বৃন্দ আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন নিম গাছের অপকারিতা গুলো কি কি।

নিম ফুলের উপকারিতা

নিম গাছের কমবেশি সব অংশই তিতা হয়। কিন্তু নিমের ফুল হয় না। বর্ষাকালে নিম গাছের নিম ফুল পড়তে দেখা যায়। নিম গাছের ফুল মিষ্টি গন্ধ ছড়াই। নিম ফুলে রয়েছে উপকারি উপাদান। ত্বকের রোগ, চোখের সমস্যা, মাথাব্যথায়, বমি বমি ভাব তৈরি করে ডিমের ফুল ওষুধ হিসেবে ভূমিকা পালন করে। আবার অন্ত্রের কৃমিনাশক হিসেবেও মিমের ফুল ব্যবহৃত হয়। সুতরাং বলা যায় যে, নিম ফুল ঔষধি গুন সম্পন্ন। 

এছাড়াও অনেকের এলার্জি সমস্যা থাকে এই ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সমস্যা দূর করতে নিমের ফুল ব্যবহার করা হয়। নিমের ফুল থেকে প্রচুর পরিমাণে এলার্জি নাশক উপাদান পাওয়া যায় এই জন্য এলার্জি সমস্যা দূর করতে আক্রান্ত স্থানে নিমের ফুল বেটে মাখিয়ে দেওয়া হয় এতে দ্রুত অ্যালার্জির সমস্যা দূর হয়।

নিমের বড়ি বানানোর নিয়ম 

নিমের বড়ি তৈরি করতে গাছ থেকে পরিমাণ মতো পেরে নিন। তারপর ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সিল পাটায় ভালোভাবে নিমপাতা বেটে নিন। এবার আপনার পছন্দমত গোলাকার বড়ি তৈরি করে নিন। বড় বাসনে করে ফ্যানের বাতাসে রেখে দিন। তারপরের দিন রোদে শুকাতে দিন। নিমের বড়ির পানিস একেবারে শুকিয়ে গেলে এয়ারটাইট বয়ামে সংরক্ষণ করুন। 

এই বড়ি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। নিমের বড়ির উপকারিতা অনেক। মিমের বড়ি খাওয়ার ফলে ওজন কমাতে সক্ষভাবে ভাইরাস দূরত্ব সমস্যা দূর করতে পারবেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবেন ত্বকের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করতে পারবেন চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন পাশাপাশি এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন তারা নিয়মিত নিমের বড়ি খাবেন।

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম 

নিম গাছ থেকে সামান্য পরিমাণে নিমপাতা পেড়ে আনতে হবে। তারপর ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ভালো পানি দিয়ে নিম পাতা সিদ্ধ করে রস করে নিতে হবে। নিম পাতার পানি যতক্ষণ না সবুজ হয় যতক্ষণ সেদ্ধ করতে হবে। তারপর থেকে ছাকুনি দিয়ে ছেকে নিতে হবে। নিম পাতা তিতা হওয়ায় রসটাও তেতো। তাই এক চামচ রসের সাথে কিছু মধু মিশিয়ে তা পান করতে হবে।  প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমের সেবন করতে হবে। তবে এক মাসের বেশি সেবন করা যাবে না।

এক মাসের বেশি সময় সেবন করলে এদের শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। নিম পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে এজন্য অতিরিক্ত পরিমাণে নিম পাতার রস পান করতে থাকে এটির শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত নিম পাতার রস পান করে ফেললে শরীর এবং ত্বক উস্ক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং ত্বক ফেটে যেতে পারে। নিম পাতার রস অনেক বেশি কার্যকারী এজন্য এটি পরিমাণে কম খেতে হবে।

তৈলাক্ত ত্বকে নিম পাতার ব্যবহার 

অনেকেরই ত্বক তেলতেলে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরমের সময় টক একদম তেলতেলে হয়ে যায়। তেলতেলে ত্বক দূর করতে ব্যবহার করতে পারি। কয়েকটি নিমপাতা তা পানিতে ভালো করে। পানির রং সবুজ না পর্যন্ত পানিতে ফুটাতেই হবে। সবুজ হয়ে গেলে ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হবে। শুকনা পরিষ্কার বোতলে তা সংরক্ষণ করতে হবে।

পরিষ্কার তুলা দিয়ে মুখের গালে লাগিয়ে নিতে হবে। এর ফলে আমাদের ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর হবে। নিম পাতার ফেস ব্যবহার করলে ত্বকের লোমকূপে লুকিয়ে থাকা ময়লা দূর করতে, কালো দাগ দূর করতে, ত্বককে কমল করে তুলতে এবং উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিম পাতা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। 

নিম পাতার ফেসপ্যাক বানানোর নিয়ম

পরিমাণ মতো নিমপাতা নিয়ে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। নিম পাতাটা শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর নিম পাতা গুড়া করে নিতে হবে। তারপর তিন চামচ নিম পাতার গুড়া ও দুই চামচ চন্দন পাউডার মিশিয়ে নিতে হবে এবং এর সাথে সামান্য পরিমাণে পানি ও এক টেবিল চামচ গরম গোলাপজল দিতে হবে।এইসব উপকরণ একসাথে মিশাতে হবে। এভাবেই তৈরি হয়ে গেল নিম পাতা ফেসপ্যাক।  

নিম পাতায় প্রচুর কার্বোহাইড্রেট সহ ভিটামিন সি রয়েছে। কার্বোহাইড্রেট যা ত্বককে মস্তরাইজ অথবা তরতাজা রাখতে সহায়তা করে আর ভিটামিন সি টক থেকে যাবতীয় কালচেদা ব্রণের সমস্যা কিংবা অ্যালার্জিজনিত ফুসকুড়ির সমস্যা দূর করে। নিম পাতা ব্যবহার করার পরে ত্বক ভেতর থেকে সুন্দর হয়ে উঠবে। নিম পাতা ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

নিম পাতা শুধু ত্বকের জন্যই উপকারী নয় বরং নিম পাতার শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী নিম পাতা ব্যবহার করার ফলে বিভিন্ন রোগবালায় থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন নিম গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি সাথে নিম পাতার ফেসপ্যাক বানানোর নিয়ম।

পাঠকদের কিছু প্রশ্ন

নিম পাতা খেলে কি অ্যালার্জি বৃদ্ধি পায়?
অনেকের মনে এই প্রশ্ন থাকে যে নিম পাতা খেলে কি অ্যালার্জি বৃদ্ধি পায় নাকি?? নিম পাতা খাওয়ার সাথে এলার্জি বৃদ্ধি পাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই বরং নিম পাতা খাওয়ার ফলে এবং নিম পাতা ত্বকে ব্যবহার করার ফলে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দূর হয়। তবে প্রত্যেকের শরীর এক নয়। আপনার যদি নিম পাতয়এলার্জি জনিত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিম পাতা থেকে বিরত থাকায় উত্তম।

নিম পাতা কি অক্সিজেন সরবরাহ করে?
হ্যাঁ নিম পাতা প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে এর জন্য বিজ্ঞানীরা বলেন বাসায় নিম গাছ লাগাতে। বাসায় নিম গাছ লাগানোর ফলে বাসায় সব সময় টাটকা এবং স্বাস্থ্যকর অক্সিজেন সরবরাহ হবে। এই পৃথিবীতে গাছের সংখ্যা যত কমতে থাকবে অক্সিজেন সরবরাহের পরিমাণ কত হ্রাস পাবে এজন্য বেশি বেশি গাছপালা লাগাতে হবে এবং অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। ১৯০০ সালে তুলনায় ২০০০ সালের পৃথিবীতে গাছে তুলনা অনেক কম যার কারণে মানুষের রোগবালয়ের সংখ্যা এত বেশি।

নিম গাছের উপকারিতা কি কি?
আপনি কি নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? প্রিয় পাঠক বৃন্দ নিম গাছের উপকারিতা এক দুই লাইনে বলে শেষ করা সম্ভব নয়। নিম গাছের প্রতিটি উপাদানই অনেক বেশি উপকারী। তাই আপনি যদি নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে উপরে দেখুন আমরা নিম গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

নিম পাতা তরকারি করে খাওয়া যায়?
নিমপাতা কি তরকারি করে খাওয়া যায়? আপনি চাইলে নিম পাতা তরকারি করেও খেতে পারেন তবে নিম পাতার তরকারি অনেক বেশি তিতোষাদের হবে। যে কোন খাবারে নিমপাতা ব্যবহার করলে খাবারটি অনেক বেশি তৃতীয় হয়ে যায় এজন্য নিমপাতা তরকারিতে ব্যবহার করা হয় না তবে নিম পাতার বরি বানিয়ে খাওয়া যায় এটি শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

নিম পাতা খেলে কি ওজন কমে?
নিম পাতা খেলে কি ওজন কমে? আপনারা যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন তাদের জন্য একটি দুর্দান্ত উপায় হলো নিমপাতা নিম পাতা খাওয়ার মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত ওজন থেকে রেহাই পেতে পারবেন। অতিরিক্ত ওজন থাকলে দেখতে বেমানান লাগে এবং কোন জামা কাপড় পড়লেও দেখতে ভালো লাগে না এজন্য নিম পাতার রস খাওয়া শুরু করুন নিম  পাতার রশ খাওয়ার ফলে দ্রুত হারে ওজন কমতে থাকবে।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই এই পোস্টটি পড়ে এই মুহূর্তে জানতে পেরেছেন নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।  এছাড়াও জানতে পেরেছেন নিম ফুলের উপকারিতা, মিমের বড়ি বানানোর নিয়ম, নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম, তৈলাক্ত ত্বকে নিম পাতার ব্যবহার, নিম পাতার ফেসপ্যাক বানানোর।

আরো জানতে পেরেছেন যে নিম পাতা যেমন আমাদের উপকার করে পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।  তবে এর উপকারিতাই বেশি পাওয়া যায় কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে নিম পাতা সেবন করলে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর। আশা করি এই পোস্ট পড়ে আপনি নিম পাতা উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তার ধারণা পেয়েছেন।

এতক্ষণ ধরে আমার এই পোস্ট পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনার বন্ধুদের ও আত্মীয়দের জানাতে এই পোস্টটি তাদের সাথে শেয়ার করুন। 
পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url